বেকার বকবক # ৫
মাঝরাতে তোমার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে উঠে মাথার কাছে জানলা খুলে ঝাপসা চোখে তুমুল বৃষ্টি দেখলাম কিছুক্ষন। ঝমঝমিয়ে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। অথচ গত কদিন ছিল শুধু মেঘের আনাগোনা। মেঘের ওপর মেঘ , তার ওপর আরও মেঘ। থমথমে , নিশ্চুপ , অন্ধকার মাখা। বালক মেঘ, বালিকা মেঘ , ছোকরা , বৃদ্ধ , সাদা , কালো , পুরুষ ও নারী মেঘ। সবাই যন্ত্রনায় নীল , বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখা ক্ষোভ , কষ্ট , দুঃখ নিয়ে নড়ছে না চড়ছে না কতগুলো মেঘ। কেউ দেখছে না ওদের , কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। ব্যাস্ত “don’t care” দিন হুড়মুড় করে এগোচ্ছে নিজের কাজে। অফিসের কাজ , বাড়ির কাজ , স্কুল , পার্টি , নিছক আড্ডা , বিনোদন , হাসি , অভিনয় নিয়ে মুখোশ পরা দিন গড়িয়ে চলেছে। আর সবার অগোচরে জমছিল মেঘ । ওরা আসছিল দূর দূর থেকে। Social Network এ হাসি হাসি selfie , সুখের সব মুহূর্ত, যাবতীয় ভাল থাকাথাকি সরে সরে যাচ্ছে ক্রমাগত।
মেঘ গুলো শুধু Zombie র মতো কান্না চেপে থমকে আছে নীল আকাশের আঁচলের খুট ধরে। তারপর যন্ত্রণা চাপতে চাপতে নিম্নচাপ , depression যাকে বলে গোদা বাংলায়। একা এবং একা সেইসব মেঘ গুলো depression এর শেষ নৌকোয় চেপে সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ভাসিয়ে দিল নিজেদের। ভাসতে ভাসতে চেপে রাখা সব কান্না আজ রাতে ঝরছে বৃষ্টি হয়ে। Las Vegas থেকে এসেছে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ , কতগুলো মেঘ এসেছে মায়ানমার থেকে ,Jerusalem থেকে ,কানসাস Charlottesville থেকে, একটা বড় দল আফগানিস্তান , ইরাক থেকে। আরও অনেকে কলকাতা , মুম্বাই ,ঢাকা , দিল্লী আর নাম না জানা প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহর থেকে। সারা পৃথিবীর আনাচ কানাচ থেকে দল বেঁধে ওরা জমায়েত হচ্ছিল। আজ রাতে ওরা আর পারল না , আর পারছে না ওরা। সব ক্ষোভ যন্ত্রণা কান্না আজ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে , ওরা চায় ভাসিয়ে দিতে সব কিছু , এই পৃথিবীর সব ক্লেদ , সব অসুখ, সব ভণ্ডামি , সব অন্যায় ওদের চোখের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় ওরা। ভেসে যাক , কাঁদুক। কাঁদো , কাঁদো , কাঁদো মানব সভ্যতা , তোমার কান্না শেষ হলে আবার শান্তিতে ঘুমোতে যাব আমি , তখন আকাশ আবার মেলে দেবে হাসিখুশী নীল আঁচল , আমাদের সবার ওপরে।
No comments:
Post a Comment