Thursday, August 23, 2018

খবর




বেকার বকবক #২৫


যে ছেলেটা  রোজ সকালে অসীম দক্ষতায় খবরের কাগজটা একটা গার্ডার দিয়ে বেঁধে ঠিকঠাক টিপ্ করে ছুড়ে পৌঁছে দিয়ে যায় দোতলার বারান্দায় সেই ছেলেটা জানে না।  ঘুম থেকে উঠে দোতলার মল্লিক বাবু চায়ের কাপ হাতে সকাল সকাল পেয়ে যান ওই মুহূর্তে ওনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ , খবর।  কালো রঙের  ছাপা অক্ষর গুলো দূর দূর থেকে নানা রঙের ছবি এঁকে  দিয়ে যায় মল্লিকবাবুর মনে।  যদিও ইদানিং চায়ের কাপে মেরি বিস্কুটের MA অবধি ভেজাতে ভেজাতে হেডলাইন গুলো পরে রিরি করে ওঠে ওনার শরীর।  এ কি সব খবর ! তবু পড়েন।  প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা।  সাদা কালো রঙীন।  কোন কোন খবরের কোন রঙ থাকে না।  কোন খবর বাসী , কোনটা ভেজাল , কোন কোনটা আবার খবরই না।  নিজস্ব সংবাদদাতার পাতা ভরানোর আছিলা।  আবার জবর খবর বলে কাগজ বেচার চকমকি।  তাও মল্লিকবাবু পড়েন , কারন না পড়লে ওই সকালের কাজটা ওনার সুসম্পন্ন হয়না।  অনেকদিনের অভ্যেস বলে কথা।  বাচ্চা  ছেলেটা জানে না , কিন্তু বাড়ি বাড়ি কাগজ বিলি করে একটু পাউরুটি আলুর দম খেতে পায়।  না হলে তো খাবার জোটে না।  

মল্লিকবাবুর ছেলে খবর পরে তার iPad এ।  গিন্নি টিভির পর্দায়।  পাশের বাড়ির কলেজ যাওয়া মেয়েটা টুইটারে।  রাম শ্যাম জদু মধু যা খবর  পাওয়ার পায় হোয়াটস্যাপে।  আর আছে ফেসবুক নিউজ।  সেখানে সবাই খবর।  জবর খবর , ফেক নিউজ , লাইভ কভারেজ ,  সেখান থেকে বলছি , লেটেস্ট নিউজ , উড়ো খবর , ওয়ার্ল্ড  নিউজ, ফ্যাশন নিউজ , টলি বলি হলি নিউজ।  শেষ নেই, অফুরন্ত খবর আর খবর। তৈরী হচ্ছে , পরিবেশিত হচ্ছে , আর গোগ্রাসে গিলছে সবাই।  ওই ছেলেটা জানে না।  বাড়ি বাড়ি কাগজ দেওয়া শেষ হলে স্কুল যেতে হবে ওকে।

Wednesday, August 15, 2018

ঢিপি





বেকার বকবক #২৪


রক্তচাপের সমস্যা আমার কোনদিন নেই।  বছরে একবার ডাক্তারের কাছে check up এর জন্য গেলে সবসময়ই ওই ফুস ফুস ফুউস করে Blood Pressure মেপে ডাক্তারবাবু চাপ নিও না গোছের এর একটা হাসি দেন।  আর চাপ নেওয়ারই বা আছে কি , আমি তো বিন্দাস আছি।  কিন্তু ইদানিং একটা কিছু হচ্ছে।  মাঝে মাঝে কিরকম মাথা ঘোরে , চোখে ঝাপসা দেখি , কোথায় যেন একটা কি গুড়গুড় করে ওঠে।  বুঝি না ঠিক।  সবসময় না , মাঝে মাঝে।  হচ্ছে হোক চলছে চলুক করে বেশ কদিন কাটিয়ে দিলাম। আবার  একদিন মাথাটা কিরকম ঘুরে উঠলো  , ওই গুড়গুড়টাও।  ব্যাপারটা  নিয়মিত হয়ে ওঠার পর একদিন চলেই গেলাম ডাক্তারের কাছে।  নানারকম প্রশ্ন করে আমায় ব্যতিব্যস্ত করে শেষে বলে কিনা তোমার pressure টা monitor করতে হবে।  Blood Pressure ? আমার ? যাক গে , হল সে monitoring. সপ্তাহ দুয়েক পর অনেক data analysis করে তিনি বলেন উনি নাকি দুটো ঢিপি মতো দেখতে পাচ্ছেন ! আরও কাওতালির পর বুঝলাম আমার BP দিনের দুটো সময় অনেকটা high  হয়ে যাচ্ছে , বাকি সময় normal . একটা graph  আঁকলে তাই দুটো  ঢিপি দেখা যাচ্ছে।  কিসের থেকে এটা হচ্ছে ? জিজ্ঞেস করলেন মাঝ সকালে আর ভর সন্ধ্যেবেলা আমি কি করি।

কি করি কি করি করে চিন্তায় পড়লাম।  ভাবলাম।  আরও ভাবলাম।  গল্পের একটা গরু গাছে ওঠার চেষ্টা করছিল তাকে বকেঝকে  টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে practically ভাবলাম। তাও প্রায় কিছুই পাই না।  "মাঝসকাল" আর "ভরসন্ধ্যে" শব্দগুলো বিড়বিড় করলাম কিছুক্ষন।  তারপর হঠাৎ মনে হল আজকাল সকালবেলা মাঝে মাঝে কিরকম যেন মনে হয় দিন শেষ হয়ে এল।  ভরসন্ধেবেলাও কি যেন  .... চোখ বুজতেই দেখতে পেলাম  হাঁস , নদী ,উষ্ণ  প্রস্রবণ , নেতাজী , ফুল , মেকআপ নেওয়া সূয্যিমামা , সুন্দরী রমনী , বাঘ , পাখি , ঝর্না , পাহাড় , শ্রীরামকৃষ্ণ এমন কি এক জোড়া হনুমান ও আমার দিকে Good Morning , Good Morning ,  সুপ্রভাত , সুপ্রভাত বলতে বলতে ছুটে আসছে।  এ ধরাধামে যে কবছর আছি এত good morning আগে আমায় কেউ বলেনি।  প্রভাত আমার এত সু হয়নি আগে কোনদিন যত  হয়েছে গত কয়েকমাসে , তাও ভরসন্ধেবেলা । মনে পড়ল এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার গানটার অন্তর্নিহিত অর্থও তো বুঝতে পারছি ইদানিং ই ।  তাহলে কি সত্যি তাই ? আমার মাঝসকালের ঘুমঘুম ভাব  , আমার ভরসন্ধ্যের কদম কদম বাড়ায়ে চল তাহলে কি ?

ডাক্তারের অফিস থেকে ফোন করেছিল।  বলেছি আমি ঠিক আছি।  সকাল আর সন্ধ্যে আসলেই বুক ঢিপ ঢিপ করে , আমি ঢিপিতে উঠি আবার ঢিপি থেকে নামি।  দিনে দুবার।  নিয়ম করে। সামলে সুমলেই চলছিলাম।  আজ আবার  সারাদিন ধরে আমার হোয়াটস্যাপ  জুড়ে পতপত করে হাজার হাজার তেরঙা পতাকা উড়ছে , উড়ছেই।  আর ভাল লাগছে  না জানেন ? মনে হচ্ছে ওই ঢিপির ওপর উঠে ঝাঁপ দিয়ে পরতে পরতে  বলি , 'এ আজাদি ঝুটা হ্যায় , বিলকুল ঝুটা হ্যায়'।



Readers Loved These Posts