Thursday, November 30, 2017

সম্পর্ক

বেকার বকবক # ৪


কিছুদিন হল এক মহিলার  সাথে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি আমি ।  কিছুদিন বলা ভুল হবে  , কিছু বছর ।  প্রায় বছর সাতেক।  Los Angeles এ বেড়াতে গেছিলাম।  তখনই প্রথম আলাপ।  প্রথম আলাপেই ভাল লাগা , আর তারপর একসাথে পথচলা।  দিন গেছে আর আমার বিশ্বাস বেড়েছে ওর ওপর।  ভাল লাগাও তরতর করে এগিয়েছে।  অনেকবার একসাথে long drive এ গেছি আমরা।  কম দূরত্বেও আমার পাশে থেকেছে ও , আর আমাদের মধ্যে দূরত্ব কমেছে। সব ঠিকঠাকই চলছিল, তারপর একদিন আচানক , ওই যা হয় আর কি।   যাঁরা San Francisco Bay Area য় থাকেন তাঁরা Vasco Road চেনেন। একবার ওদিকে কোথাও একটা যাওয়ার সময় highway ছেড়ে আমার ইচ্ছে করল Vasco Road দিয়ে যেতে।   পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ চলে গেছে জনবসতি কে দূরে রেখে।  তার মাঝে সারে সারে windmill . হাওয়ার বেগের সাথে তাল রেখে ঘুরে চলেছে প্রকাণ্ড windmill গুলো , আবার কখনও থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।  ওদের মধ্যে দিয়ে নেড়া পাহাড়গুলোর সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আমি গাড়ি চালাচ্ছি। কিন্তু ওর সেটা ঠিক পছন্দ হল না. দেরী হয়ে যাচ্ছে যে।  বিকেলের রোদ এক পাহাড় থেকে অন্য্ পাহাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চু কিতকিত খেলছে।  ভীষণ ভাল লাগছে আমার।  কিন্তু ওর মুখ গোমড়া।  প্রথমে কিছুক্ষন “ওই দিক দিয়ে গেলে হয় না” বলেছিল বার বার , তারপর চুপ করে গেল।  অভিমান।  চুপ করে বসে রইল আমার পাশে, শেষ অবধি।  ওই প্রথমবার একটু মনোমালিন্য বলা যায়।  মাঝেমাঝে হয় এখনও , কারন আমার তো সবসময় নিয়মের পথে চলতে ইচ্ছে করে না , কি করব বলুন ।  তবু  আমরা একসাথেই আছি , পাশাপাশি।   অফিস যাওয়ার সময়ও পাশে থাকে , বেড়াতে গেলেও , অচেনা কোথাও গেলে তো থাকেই। 

Friday, November 24, 2017

ঝরা পাতা






বেকার বকবক # ৩


আমাদের  একটা সাদা রঙের কুকুর ছানা আছে।  একটা কালো টুপি পড়ে  তাকে নিয়ে সকাল বিকেল হাঁটা আমার কাজ।  যে পথ দিয়ে হাঁটি সেখানে একটা সবুজ মাঠের ধার দিয়ে সাড় বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে কতগুলো গাছ।   অনেকরকমের গাছ। কি নাম তাদের জানি না। হেঁটে যাই আর গাছগুলো বিকারহীন মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। হয়ত এভাবেই  দাঁড়িয়ে আছে, অনেক বছর ধরে।  বেশ কয়েকমাস হল হাঁটছি , কিন্তু এতদিন  হাঁটার সময় সেভাবে ওই গাছগুলোকে দেখিনি। গত সপ্তাহ দুয়েক ওই গাছগুলো কেমন যেন চোখে পড়ছে।  এতদিন ওরা সবাই সবুজ ছিল , আজকাল ওরা রঙ বদলেছে।  কেউ হলুদ, কেউ লাল , কেউ তামাটে আবার কেউ কেউ এখনো ঘন সবুজ।  হাঁটার সময় আমাদের ওপরেই ঝরে পরে পাতা।  ওই সব বিভিন্ন রঙের পাতা।  রাস্তাটা ভরে থাকে ঝরা পাতায়।  আর ওই পাতা মাড়িয়ে আমি হেঁটে যাই।  একদিন একটা ছবিও তুলেছিলাম , কি জানি হয়ত দুটো।  মাঝে মাঝে খুব ভাল লাগে। একটা করে  দিন যায় , আরও পাতা ঝরে পরে।  রাস্তাটা আর দেখা যায় না , শুধু নানারঙের প্রাণহীন শুকনো পাতা।  হাঁটি , নিয়ম মাফিক।  হাঁটতে হাঁটতে ভাবি আবার অনেকসময় কিছুই ভাবি না।  ভাবার কি আছে ? এটাই তো নিয়ম , সবাই যখন শুধুই  মানুষ সবাই সমান , আর যখন নানা রঙের মানুষ , তখনই  তো ঝরে পরা।  Civilization এর ইতিহাসই তো তাই , রঙ যখন প্রকট তখনই  fall , মানে পতন।  

Sunday, November 19, 2017

Turkey Day

বেকার বকবক # ২

আমার অফিসে প্রত্যেক বছর এই নভেম্বরের শেষে কতগুলো turkey চাকরির খোঁজে আসে। 
San Ramon এর একটা ছোট পাহাড় থেকে নেমে আসে কর্পোরেটের আঙিনায়।  কেন কিভাবে কে জানে , তবু আসে।  চার পাঁচজনের দল ঘুরতে থাকে এ দরজা থেকে ও দরজা। কোন কোন দিন আরও অনেক বড় দল।  পাহাড়গুলো বৃষ্টি ভিজে এখন ঘন সবুজ।  মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো রঙ মেখে বসে আছে।  একটা নীল আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের। ঝকমকে রোদের দিনে খুব সুন্দর লাগে পাহাড় গুলোকে।  আবার যেদিন  মেঘ মেখে বসে থাকে সেদিন  খুব মন কেমন করে।  ওই সুন্দর গড়িয়ে আসা পাহাড়ের গায়ে যে পাখিগুলোর বাস ওরা যে কেন আসে কর্পোরেটের দরজায় বুঝি না।  বেশ তো ছিলি, রোদ মেখে  ঘুরে বেড়াচ্ছিলি কিংবা বৃষ্টি  ভিজে নেই-কাজ দিন গুজরাচ্ছিলি।  তোদের মতো কাজ নেই কর্ম নেই দায়িত্ব নেই দায় নেই জীবন পেলে আমরা তো বর্তে যেতাম।  সিগারেট ব্রেক এ আমার সাথে মূলত মোলাকাৎ ওদের  (Cigerette Smoking is injurious to health , সিগারেট কর্কট রোগের কারন এবং কর্কট মৃত্যুর কারন ইত্যাদি ইত্যাদি ). সেখানেই যা কিছু কথোপকথন।  যদিও কোনদিনই কোন উত্তর পাই নি।  Automated দরজার সামনে রোজ এসে দাঁড়াবে , কিন্তু কোনদিন ভেতরে ঢুকতে পারে না , আমি অন্তত দেখিনি।  সবাই দেখে , ছবি তোলে , টেক্সট করে বন্ধুদের বা social network এ পাঠায়।  Like ও পায় নিশ্চই অনেক , কিন্তু ওরা চাকরি পায় না।  সেদিন আমার সিগারেট প্রায় শেষ , তখন একটা Turkey আমার খুব কাছে চলে এল।  ভাবছি পিছু হটব না কি , তখন হঠাৎ ওর চোখে চোখ পড়ল।  বড্ড মায়াবী একটা চোখ , অনেক কিছু লেখা আছে তাতে।  আমি কি ছাই জানি নাকি সে চোখের ভাষা।  তবু তাকালাম।  ওর চোখে চোখ রেখে।  হঠাৎ মনে হল খুব বিপদে পড়েই ও চাকরির খোঁজে এসেছে।  চাকরিটা না পেলে হয়ত ওর জীবন সংশয়।  কি জানি ? উল্টো পাল্টা কি ভাবছি ভেবে সিগারেটটা  নিভিয়ে ফিরে গেলাম আমার অফিসে।  Elevator যখন 4th আর 5th floor এর মাঝামাঝি , হঠাৎ মনে হল আমারও  তো Turkey Day যে কোন দিন আসতে পারে যদি কোন বন্দুকধারী  মানসিক উম্মাদ কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়  আমার বাঁচার অধিকার ?

“ডুব” - A Review


হল থেকে বেরোনোর সাথে সাথে একজন জানতে চাইলেন কেমন লাগল ছবিটা। সরাসরি কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আমি খুব টগবগিয়ে কথা বলতে পারি না। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, এই ছবিটা কেমন ছবি সে কথার উত্তর এক কথায় ভাল বা মন্দ বললে ছবিটার প্রতি সুবিচার করা হয় না। মোস্তাফা সারোয়ার ফারুকি-র ছবি ‘ডুব’ human relationships এর ছবি। এই বিষয়টা দর্শককে সবসময়ই ভাবায় কারণ সম্পর্ক বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন স্তরে আমাদের ছুঁয়ে যায়, অবশ্যই যদি পরিচালক ঠিক ঠিক ভাবে সম্পর্কের সূক্ষ তার গুলোকে সুরে বাঁধতে পারেন। Drama ও melodrama র মধ্যে ব্যাবধান খুব সূক্ষ । ফারুকি সেই ব্যবধানটা বেশ মুনশিয়ানার সাথে টান টান রাখতে সফল হয়েছেন “ডুব”-এ যা খুবই শক্ত কাজ । আমার মতে ছবিটার সবচেয়ে বড় সাফল্য এখানেই।
চরিত্র মূলত চারটি। জাভেদ (ইরফান খান ), মায়া (রোকেয়া প্রাচী ), নিতু (পর্নো মিত্র ) এবং সাবেরী (নুসরত ইমরোজ তিশা) . প্রতিষ্ঠিত চিত্রপরিচালক জাভেদের স্ত্রী মায়া ও মেয়ে সাবেরী। নিতু সাবেরীর স্কুলের বন্ধু। জাভেদের সাথে নিতুর সম্পর্ক এবং তার জের কিভাবে এই চারটি চরিত্রকেই প্রভাবিত করেছে সেটাই ছবির মূল বিষয়। গল্পে নতুনত্ব কিছু নেই , তবে এরকম ঘটনা যে সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি করে ফারুকি তাকেই ধরার চেষ্টা করেছেন খুব সংবেদনশীলতার সাথে।
অভিনেতারা সকলেই পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত। এবং তাদের অভিনয়ের নিজস্ব style আছে। যেভাবে চরিত্র গুলোকে দেখানো হয়েছে তাতে casting যথাযথ হয়েছে বলা যায়। সকলেই ভাল অভিনয় করেছেন , বিশেষ করে প্রাচী ও তিশা। নিতু-র চরিত্রটা আরেকটু ভালভাবে দাঁড় করানো উচিত ছিল। নিতুকে এ ছবির villain হিসেবে মনে হয়েছে , হয়ত সেটা ঠিক নয়। নিতু ও জাভেদের মধ্যে সম্পর্কটা আরেকটু real estate পেলে script টা আরো মজবুত হত বলে আমার ধারণা।
এ ছবির আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল visuals. অসম্ভব ভাল এবং বুদ্ধিদীপ্ত ক্যামেরার কাজ। Cinematographer শেখ রাজিবুল ইসলাম অনেকটা কৃতিত্ত্ব দাবী করেন নিঃসন্দেহে। Music ও ছবির বিষয় ও গতির সাথে মানানসই।
নিছক entertainment এর ওপরও যদি কিছু চান , এমন ছবি যা আপনাকে ভাবাবে বা ছুঁয়ে যাবে তবে “ডুব”-এ ডুব দিয়ে দেখুন , পস্তাবেন না।


Saturday, November 18, 2017

“Sonata” - A Review


সমস্যাটা হল information overload. একটা মুভি দেখতে যাওয়ার আগে আপনি কি করবেন ? একটু Google Search করে মুভিটার রিভিউ পড়বেন ? পন্ডিতেরা কি বলছে শুনবেন ? আর আজকাল তো promotion এর যুগ।  ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই এত ভাল এত ভাল বলে এমন শোরগোল শুরু হয়ে যায় যে মনে হয় ছবিটা না দেখলে জীবনই বৃথা। অথচ “Sonata”-র যতগুলো রিভিউ পড়েছি সবাই বলছে  প্রায় সময় নষ্ট। আমাদের এত ব্যস্ত জীবনে সময় নষ্ট করার সময় কোথায় ? তাও আবার হলে গিয়ে ছবি দেখে।  এদিকে অপর্না সেন এর ছবি।  তার ওপর শাবানা আজমী , লিলেট দুবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই , ওই একটা দিল্লী কা লাড্ডু টাইপের ছবি যা দেখলে পস্তাবো, না দেখলেও পস্তাবো এই ভেবে নিয়েই গেছিলাম “Sonata” দেখতে ।  

সবাই জানেন ছবিটা  Mahesh Elkunchwar এর মূল নাটক “Sonata” অবলম্বনে তৈরী।  অপর্না সেন মোটামুটি মূল নাটকটাকেই অপরিবর্তিত রেখেছেন।  আরেকটা কথা বলে দেওয়া বোধহয় ভাল , Elkunchwar হাতে গোনা এমন কয়েকজন মারাঠী নাট্যকারের অন্যতম যাঁরা কোনদিন populist ও commercial হাওয়ায় গা ভাসান নি।  

Thursday, November 16, 2017

ফেরা




বেকার বকবক # ১

লাল ব্রেকলাইটে ধাঁধিয়ে যাচ্ছে চোখ , দিন শেষের   ট্রাফিক এগোচ্ছে ধীর  গতিতে।  তবু এগোচ্ছে।  পাশাপাশি সব গাড়িতেই একা  একা  কিছু মানুষ , যে যার গন্তব্যে চলেছে শেষ আলোর রেশ নিয়ে।  ঝাপসা লাগছে সবাইকে।  শুধু খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করে চলেছে গাড়ির wiper.  পেরিয়ে গেলাম  Bernal , Castewood ও পেছনে পড়ে রইল।  এঁকে বেঁকে চলেছি Sunol grade এর দিকে।  আর তারপর Niles Canyon.  NPR এ 1.4 Trillion Dollar এর tax cut , Northern California shooting. Sunol এর ছোট ছোট পাহাড়ের বুকে মনকেমন করা ক্লান্ত মেঘ থমকে আছে। বাঁক নিয়ে চলা রাস্তা আরও মন্থর।  ভাল লাগছে না রেডিওর বকবক।  ঝিরঝিরে বৃষ্টি বাড়ছে আস্তে আস্তে।   দিনের শেষ আলোটুকু মুছে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার।  রেডিওটা বন্ধ করে CD Player টা on করে দিলাম। গাড়ির জানলায় একটানা বৃষ্টির শব্দ। প্রায় অন্ধকারেও সোনালী পাতা নেড়ে হাসিখুশি কটা Fall Color মাখা গাছ।  দূরে কোথাও একটা siren বাজিয়ে চলে গেল emergency vehicle. GPS বলছে  আরও সাত  মাইল।  থমকে থাকা মেঘ গুলোও আর পারল না , হুড়মুড় করে বৃষ্টি হয়ে ঝরতে থাকল গাড়ির ওপরে।  অঝোর ধারায় বৃষ্টি।  অস্পষ্ট গাছ , বাড়ি , উল্টোদিক থেকে আসা গাড়ি সরে সরে যাচ্ছে, খুব দ্রুত ।  মনে হচ্ছে গাড়ির ভেতরই ভাল আছি , বাইরের পৃথিবীটা অচেনা একটা  জায়গা , যেখানে অনেক বিপদ , সংকট অপেক্ষা করে আছে।  তারপর চলতে চলতে , চলতে চলতে , পৌঁছে গেলাম , বাড়ি। তখন CD তে নীচুস্বরে সুমন চট্টোপাধ্যায় গাইছেন “আমরা শুধু এই আকালেও স্বপ্ন দেখি “।

Thursday, November 2, 2017

আত্মহনন


সকলেরই একটা বাঁধা পথ থাকে
সকলেরই থাকে একটা নৈহাটি লোকাল
সময় মিলিয়ে বেরিয়ে পড়া সকাল সকাল
দিন গেলে ফিরে যাওয়া সেই বাঁধা পথে ,
সকলেরই একটা বাঁধা পথ থাকে।

সকলেরই থাকে কিছু খুচরো অসুখ
বাঁধা পথে যেতে যেতে মন উশখুশ
সকলেরই থাকে স্বপ্ন , তুমুল রেল অবরোধ
ভেঙেচুরে দিনরাত অন্যদিন , আত্মবিরোধ
সকলেরই অন্যপথে টুকরো টুকরো সুখ।

Readers Loved These Posts