Friday, April 13, 2018

হালখাতা

বেকার বকবক #২২


ব্যয় হয়ে গেছে সব কিছু।  মুছে গেছে সব দেওয়া কথার স্মৃতি ।  নাছোড়বান্দা জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে সব হিসেব।  Balance Sheet ফাতরাফাত।  নবজাতকের কাছে করা সব অঙ্গীকার খোলামকুচির মতো উড়ে গেছে হাওয়ায়।  আয়ের ঘরে কটা টাকা , কিছু ছদ্ম রোশনাই, মেকি সুখ আর হাসি হাসি অন্তঃসারহীন selfie ।  ব্যয়ের ঘরে বাকি সব কিছু।  খরচের খাতায় রক্ত , গুলি , মানবিকতা , শান্তি , ভালবাসা আরও কত কি।  তাও টলমল করে হাঁটি। সামলে নিতে চেষ্টা করি।  মুখ থুবড়ে পড়ি, আবার উঠি।  চলার নামই  নাকি  জীবন।  এভাবেই চলতে চলতে  … ধুত্তোর, বলছে সবাই এগোচ্ছি। ভাইকে মেরে, বোনকে পুড়িয়ে, মানুষ ঠকিয়ে, সন্তানকে খুন করে, এগোচ্ছি। কোথায় কেউ জানিনা। অথচ খরচ হয়ে গেছে আলো , আছে শুধু অন্ধকার আর তার মাঝে আশা মাখা কটা ভীরু জোনাকি।  তবু আছে। এভাবেই কাটছে দিন। এভাবেই সপ্তাহ পেরিয়ে মাস, মাস গেলে বছর, নিয়মের।

টলমল পায়ে যেতে যেতে ধূলো ঝড় উঠেছে আবার। ভাঙছে গাছের ডাল। উড়ে যাচ্ছে শুকনো পাতা। ঝরে যাচ্ছে আমের মুকুল।  “এ বছর কি ভাল আম খাওয়া হবে না”-র চিন্তা ফিরে এসেছে আবার।  পাড়ায় পাড়ায় সেই চৈত্রের সেল।  হুজুগের দিনে উঠবে শুভেচ্ছার ঝড়। “জীর্ণ  পুরাতন যাক ভেসে যাক”-এর বিধি মেনে বাৎসরিক গুনগুন। “ভাল কাটুক , শুভ হোক”-এর copy paste  ।  নিয়ম মাফিক গলাগলি আর ভালবাসা বিনিময় শেষ হলে আবার খরচাপাতি।  আবার মুখ থুবড়ে পরা।  তার থেকে আসুন সেই লাল খাতাটা বার করি।  নতুন খাতা।  লাল মলাট , কাপড়ের।  অদ্ভুত দেখতে , লম্বা মতো।  ভাঁজ করে রাখতে হয় , বাঁধতে হয় ফিতে দিয়ে।  সঙ্গে একটা ক্যালেন্ডার।  বৈশাখ থেকে চৈত্রের দিন গুলো জুলজুল করে চেয়ে আছে যেখানে ভাল থাকার নিবিড় প্রত্যাশায়।  দরবেশ , সন্দেশ , রাজভোগ ও চাই ? আচ্ছা হোক , কোল্ড ড্রিঙ্কস ও নিন।  কিন্তু ওই খাতাটা খুলুন। নতুন করে। প্রথম পাতায় একটা লম্বা লাইন টানুন , যার একদিকে আয় আর অন্যদিকে ব্যয়।  আয়ের দিকে বড় বড় অক্ষরে লিখুন “মনুষ্যত্ব “. লিখবেন ? দেখাই  যাক না চেষ্টা করে ? নতুন ভাবে  ? আজ , পয়লা বৈশাখে ? 

Friday, April 6, 2018

চিঠি

বেকার বকবক #২১


তোমাকে চিঠি লিখিনি কোনদিন।  লেখার প্রয়োজন হয়নি।  প্রয়োজন হলেও হয়ত লেখা যেত না । ব্রিজের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ মনে পড়ল তোমার কথা আজ ।  মাইলের পর মাইল লম্বা একটা ব্রিজ।  রাতের অন্ধকারে খুব কিছু একটা দেখা যাচ্ছিল না , রাস্তাটুকু ছাড়া।  দিনের বেলায় কতবার গেছি এই রাস্তায়।  কিন্তু আজ রাতে কেন জানিনা তুমি এলে , এই পথে, আমার সাথে।  অফিস থেকে বেরিয়ে যখন পার্কিং লট-এ হাঁটছি , তখন ঝুপ ঝুপ করে নামছে অন্ধকার।  সার বেঁধে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে  আছে , মনমরা। গোল হয়ে উড়তে উড়তে কতগুলো অচেনা পাখি আকাশে শূন্য এঁকে দিয়ে যাচ্ছে লালচে কালো দিনশেষের আলোয়। ওই শূন্যের মধ্যে কি তুমি ছিলে ? তুমি কি ছিলে ওই শূন্যতায় ? চলে যাওয়া আলোর পথে ? তবে কেন আজ তুমি এইভাবে  … কি জানি , জানি না। ব্রিজের ওপর থেকে  দূরে , অনেকটা দূরে ঝাপসা দেখাচ্ছে ওপারটাকে।  ব্রিজ পেরোলেই পৌঁছে যাব যে প্রান্তে।  স্পষ্ট কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না।  শুধু কতগুলো আলোর বিন্দু।  ওপারে থমকে  থাকা কতগুলো বাড়ি , হয়ত রাস্তার আলো , ব্যস্ত জনবসতি , মিটমিট করে জ্বলছে একটা শহর।  আলোর বিন্দু গুলো জলের ওপর এঁকে দিয়ে যাচ্ছে একটা স্কেচ।  আর জলে ভাসতে ভাসতে স্কেচটা আমার কাছে আসছে , আরও কাছে। কাঁপা কাঁপা জলছবি  তে আমি দেখতে পাচ্ছি তোমায়।  

স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লাইব্রেরীর মাঠ , গঙ্গার ঘাটে ভিড় করে কত লোকজন , সাঁ সাঁ করে চলে যাওয়া তিন নম্বর বাস , জিটি রোড। তিনটে ছেলে গঙ্গার ঘাটে জলে পা ডুবিয়ে বসে তর্ক করছে  সুনীল, শক্তি না অন্য্ কেউ ।  এক ফুচকাওয়ালা কিছুতেই ফাউ দেবে না , তাই নিয়ে রক্তচক্ষু একজন। সাইকেল চালিয়ে দুই বন্ধু পাশাপাশি তুমুল আড্ডা দিতে দিতে ফিরছে বাড়ি।  রিক্সার প্যাঁক প্যাঁক , বাইক , সাদা Amabassador. গলির মুখটা থমকে আছে , এগোচ্ছে না কিছুই।  রাস্তায় বসে আপেল , আঙুর , কমলালেবু বিক্রি করছে গোবিন্দদা , আর এক ভিখারী জুলজুল চোখে দেখছে।  এই সব , এই সব আমার চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে time lapse video র মতো ওই জলে।  ওই তো যতীন বাবু হনহন করে হেঁটে যাচ্ছেন , ট্রেন ধরার তাড়া।  সবার বাড়িতে রেডিওয় একসাথে সাতটা পঁয়ত্রিশের রবীন্দ্রসঙ্গীত, গাইছেন সুবিনয় রায়।  কলতলায় হৈচৈ , আপিসের ভাতের গন্ধ , ব্যস্ত দিন সেজে উঠছে আস্তে আস্তে। মাথা নীচু করে হেঁটে চলে গেল একটা মেয়ে, প্রাইভেট টিউশনে। ভোঁ ভোঁ করে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে  গেল galloping train টা যে station ছাড়িয়ে  , তার নাম উত্তরপাড়া।  মফঃস্বল শহর , আমার শহর।  আর এইসবের মধ্যে তুমি।  আমি দেখছি তোমায়।  কতদিন পর।  কতদিন পর তুমি সব পাতা উল্টে উল্টে আমাকে দেখাচ্ছো সব কিছু।  

Readers Loved These Posts