Thursday, March 22, 2018

Mrs Patterson


বেকার বকবক #২০


দোতলা বাড়ি।  তিনটে  বেডরুম।  লাল ইঁট  দিয়ে গাঁথা বাড়িটাকে বাইরে থেকে দেখলে কোন ঐতিহাসিক বাড়ি বলে মনে হয়। আশপাশের সব বাড়ি গুলোও একইরকম দেখতে।  ত্রিভুজের আকারে উঠে গেছে তাদের ছাদ।  জানলা দরজা সাদা রঙের।  সাদা পর্দা লাগানো সব জানলায়।  রাস্তার ধারে সার বেঁধে park করা গাড়ি। কোথাও কোন শব্দ নেই , দূর থেকে মাঝে মাঝে দ্রুতগতিতে চলে যাওয়া গাড়ির শব্দ ছাড়া।  কৃষ্ণা আর চন্দ্রা দরজা খুলে আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বলল , এই তোমার নতুন বাসা।  ভক করে সম্বর রসমের গন্ধ নাকে।  Heathrow airport এ নেমে প্রথমবার British accent শুনে মনে হচ্ছিল ইংরিজি ভাষাটা কোনদিন শুনিনি।  অচেনা দেশ , অচেনা মানুষজন, অচেনা সবকিছু ।  উনিশশো নব্বুইয়ের মাঝামাঝি।  প্রথমবার বিদেশ।  সম্বরের গন্ধে তাই London পৌঁছে প্রথম আমার  আমি চিনি গো চিনি তোমারে অনুভূতি।  London ঠিক না।  London থেকে একটু দূরে। ছোট্ট শহর।  নাম High Brooms । এই দুই দক্ষিণী ছেলে এ বাড়িতেই থাকে।  এটা আমাদের কোম্পানীর গেস্ট হাউস।  Project এর কাজে কেউ আসলে এখানেই থাকার ব্যবস্থা।  সুতরাং আমার জিনিসপত্র নিয়ে দোতলার কোণায় একটা ছোট্ট ঘরে ঢুকে পড়লাম।  এটাই আমার ঘর।  একটা single bed । ছোট একটা টেবিল।  জামাকাপড় রাখার একটা ছোট জায়গা , closet তার নাম।  ছাদের ওই ত্রিভুজের একটা দিক এ ঘরের একটা দেওয়াল।  সেই দেওয়ালে একটা ছোট্ট জানলা।  সে জানলায় দাঁড়িয়ে একটু আকাশ দেখা যায়।  আর দেখা যায় উল্টোদিকের কতগুলো একইরকমের বাড়ি আর রাস্তার কিছুটা।  মাস তিনেক আমাকে এখানেই আস্তানা গাঁড়তে হবে।

কাছেই একটা Indian restaurant এ রাতে খেতে গিয়ে কৃষ্ণা আর চন্দ্রা বলল ওদের Project এর মেয়াদ শেষ , তাই ওরা আর সপ্তাহ দুয়েক পর ফিরে যাবে দেশে।  দিন দুয়েকের মধ্যে বুঝে গেলাম নিয়ম কানুন।  সকাল সকাল হেঁটে High Brooms স্টেশন।  সেখান থেকে British Rail এ পাঁচ মিনিট Tunbridge Wells , যেখানে আমার অফিস।  আবার বিকেলে একইভাবে ফেরা।  হাঁটা পথেই grocery store । কিছু খাবার দাবার কিনে এনে নতুন চেনা microwave এর সাথে আলাপচারিতা।  দুসপ্তাহ পরে কৃষ্ণা চন্দ্রার ঘরগুলো খালি হয়ে গেল।  ভাবলাম একটা বড় ঘরে থাকি।  কিন্তু তখন আমার ওই খুপরি জানলার সাথে কিরকম  একটা সখ্যতা হয়ে গেছে।  ও ঘরেই থেকে গেলাম। সকাল সকাল অফিস যাই , সন্ধ্যেবেলা ফিরি।  রাস্তায় লোকজন খুব কম ।  আশপাশের বাড়ি গুলোতে কেউ থাকে বলে মনে হয় না। কাউকে দেখা যায় না।   তিনটে বাড়ি পরে একটা বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে এক ভদ্রলোককে Lawn mow করতে দেখি।  একমাত্র Grocery store এ গেলে কিছু মানুষ দেখা যায়।  মাঝে মাঝে কিছু না লাগলেও ওখানে যাই।  তারপর বাড়ি ফিরে microwave , television , ঘুম।  ঘুম আসে না , রাত প্রায় দশটা অবধি সুর্য্যের আলো , তখন  জুন  মাস।  খুপরি জানলাটায় বসে আকাশ দেখি।  কোন কোনদিন চিঠি লিখি কাউকে , কলকাতায়।

Friday, March 16, 2018

হাতের মুঠোয় পৃথিবী

বেকার বকবক #১৯

পৃথিবী এখন আমার হাতের মুঠোয়। মুঠোয় আমার ভোর হয় , মুঠোয় সূর্যাস্ত।  মুঠোর মধ্যে আনন্দের ঢেউ , মুঠোয় মনখারাপের চোরা স্রোত। মুঠোর দিকে তাকিয়ে আমার খুশী থাকা , মুঠোয় নীরবতা। রাজ্যের বন্ধুরা বকবক করছে সারাদিন এই মুঠোয় ।   কেউ হয়তো ছুটিতে কোন Sea Beach এ  , ঢেউ আর ঢেউ।  কারো পেরিয়ে গেছে মাঝরাত একটা ছোট্ট দমবন্ধ করা flat এ. কাঠ ফাটা রোদের  ব্যাস্ত দিনে কেউ  ।  অফিসের কাজে নাজেহাল একজন। আর একজন খেতে দিচ্ছে ছোট্ট মেয়েকে।  হাজার হাজার মাইল দূরে সবাই , তবু এই মুঠোতেই। 

কখনও মন খারাপ  ? এই মুঠোতে  রশিদ খান, কিংবা দেবব্রত বিশ্বাস ।  কোনদিন একলা রাতে শ্রীজাতর কবিতা।  সময় কাটানোর জন্য কোন latest film কিংবা চটজলদি শিখে নেওয়া একটা নতুন চিকেন মন চুরির recipe. হঠাৎ খুঁজে পাওয়া কাউকে।  নতুন পরিচয়। হারিয়ে গেছি ? রাস্তা চিনে পৌঁছে যাওয়া গন্তব্যে এই মুঠোতেই । ভালবাসাবাসি ও এই মুঠোয়।  রাগ অভিমান দুঃখ ঝগড়াও।  হাতের মুঠোয় থমকে আছে পৃথিবী আমার ।

Wednesday, March 7, 2018

রঙ পেনসিল



বেকার বকবক #১৮


যা যেখানে থাকার কথা থাকে না।  থাকলেও সঙ্গে অন্য কেউ থাকে , অনভিপ্রেত কেউ।  এই ধরুন দুধে জল , চালে কাঁকড় , আটায় ভুষি , সর্ষের সাথে ভৌতিক কিছু মিশে পিশে তবে  তেল. এরকম আরও কত কি। দেশটা ভেজালে ভরে গেল বলে হাহুতাশ। “আমরা খেয়েছি খাঁটি জিনিস ! কি স্বাদ আহা ! তোরা কি বুঝবি খাঁটির মর্ম ” শুনে শুনে কান পচে যেত। আমাদের কিছু আসত যেত না।  কারন ভেজাল খেতে খেতে আমরা এত অভ্যস্ত যে খাঁটি কিছু খেয়ে ফেললেই পেট খারাপ। সুতরাং খাঁটি ভেজাল নিয়ে যাহা চাই তাহা পাইনা গোছের sentu আমাদের ছিল না। তবে ছিল বিদেশী জিনিসের মোহ। খিদিরপুরের চোরা মার্কেট থেকে আনা বিদেশী চকোলেট, Chewing Gum বা নতুন ধরনের কোন খেলনা। তপুর কাকা মাঝে মাঝে আমাদের এনে দিতেন।  সেই নিয়ে চলত খুব উত্তেজনা কদিন। একবার সেরকম এক বিদেশী চকোলেট থেকে বেরোল এক পোকা। Magnifying lens দিয়ে সেই পোকাকে অনেক নিরীক্ষন করেও তাকে foreigner বলে মনে হল না। শেষে তপুর ঠাকুমা বিধান দিলেন জাহাজে করে অতদূর থেকে আসার পথে কোন দুস্টু পোকা টুক করে ঢুকে পড়েছে। সেই চকোলেট শেষ অবধি খাওয়া হয়নি।

Thursday, March 1, 2018

ল্যাম্পপোস্ট



বেকার বকবক #১৭

গোলপোস্ট থেকে শুরু করে ফেসবুক পোস্ট জীবনে কম পোস্টে তো আর ধাক্কা খেলাম না কিন্তু আমাদের পাড়ার মোড়ের মরচে ধরা ল্যাম্পপোস্টের  ধাক্কা, আমি কি ভুলিতে পারি  ? গলির ভেতর তস্য গলিতে এক কোণে রোগা পিলপিলে  ঢ্যাঙা একটা ল্যাম্পপোস্ট।  একটাই।  একটার বেশী ধার্য্য ছিল না মফস্বলের ওই গলিতে।  বেশী আলোর দাবী তখন অন্যায্য।  রাতের অন্ধকারে ওই ল্যাম্পপোস্টই আমাদের একমাত্র আলোর দিশারী।  কিন্তু আলো জ্বলবে কি জ্বলবে না সেটা ভাগ্যের ব্যাপার।  সেই সময় সবকিছুই কেন্দ্রের চক্রান্ত।  তাই ল্যাম্পপোস্টের আলো না জ্বললে আমরা জানতাম কেন জ্বলছে না।  হ্যাপা তো অনেক।  মাঝে মাঝে bulb  কেটে যেত।  তখন Electricity office এ খবর দিতে হোত।  খবর দেওয়া মানে পাড়ার কোন ছেলে গিয়ে বলে আসত "কাকা bulb কেটে গেছে " . নিয়ম ছিল electricity office থেকে কেউ এসে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখবে।  সরকারবাবু সাইকেলে করে আসতেন। সাইকেলের চেন পরে গেলে একটু দেরী হত ঠিকই কিন্তু আসতেন।  এসে উনি ল্যাম্পের দিকে তাকাতেন।  ওনার ছোট্ট  একটা নোটবুকে কিসব লিখতেন , তারপর চলে যেতেন। তার সপ্তাহ দুই পরে আরেকজন এসে একটা লম্বা লাঠি দিয়ে কিসব করে bulb বদলে যেতেন।  সেইদিন  পাড়ায় পূর্ণিমা।  কিন্তু অমাবস্যাটাই ছিল মোটামুটি   রোজনামচা।   এরকমই এক অমাবস্যার রাতে তীর বেগে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে খেলাম সেই ধাক্কা।   সাইকেল একটু আহত হল , আমার নাক দিয়ে  রক্ত পড়ল অল্প। তখন নতুন নতুন সাইকেল চালিয়ে বন্ধুদের বাড়ি আড্ডা দিতে যাওয়া শুরু করেছি। বাড়ি ঢুকে বললাম এই ধাক্কাটার জন্যই আমার বাড়ি ফিরতে এত দেরী।

Readers Loved These Posts