Sunday, January 26, 2020

নাঃ


বেকার বকবক #২৭

প্রেমের ব্যাপারে তপু বরাবরই যাকে বলে ফেলিওর। কে জি  ক্লাসে একবার বোধহয় একটি মেয়ের সাথে ভাব আড়ি গোছের একটা সম্পর্ক হয়েছিল কিন্তু তারপর থেকে শুধুই  ধূধূ মরুভূমি।  কিন্তু তাই নিয়ে তপুর কোন আক্ষেপ ছিল না।  কারন ওর মতে প্রেমে অসফলতাটা  ওর হেরিডিটারি।  সুতরাং ওই নিয়ে কোনদিন মাথা ব্যাথা করে সময় নষ্ট করার প্রশ্নই ওঠে না।  তপুর বন্ধু বান্ধবদের যখন একে একে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তখন তপুর বাবা ওর জ্যেঠুর কাছে গিয়ে বললেন , "দাদা , এবার তো ছেলেটার একটা বিয়ের ব্যবস্থা দেখতে হয় " . শোনা যায় জ্যেঠু একটু চিন্তা করে তারপর একটা কাগজে খস খস করে কিছু লিখে ওর বাবাকে দিয়েছিলেন আর সেই কাগজ নিয়ে তপুর বাবা  বিজ্ঞাপনের অফিস ঘুরে আসার কদিন পর থেকে তপু আর রোববার করে পাড়ার ঠেকে আড্ডা মারতে আসত না। বেশ কয়েকটা বাড়িতে মিষ্টি ও সিঙাড়া সাঁটিয়ে  তপু অবশেষে একটা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছিল। সে প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা। তখন এখনকার মতো প্রোগ্রেসিভ চিন্তা ভাবনা ছিল না , তার ফলে গণৎকার , জ্যোতিষী এসবের ব্যাপার ছিল না।  ধূমধাম করে তপুর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল  মিলির সাথে ।  পরে শোনা গেছে ওই বিজ্ঞাপনে কি একটা গন্ডগোল হাওয়ায় ঘোর ঘটি তপু কাঠ বাঙাল মিলিকে  বিয়ে করেছিল।  ব্যাপরটা না কি নিছক একটা প্রিন্টিং মিসটেক।  মানে বিজ্ঞাপনে "পঃ বঃ পাত্রী চাই" ছাপতে গিয়ে "পুঃ বঃ পাত্রী চাই " ছেপে দিয়েছিল।  পাত্রী সবার পছন্দ হয়ে যাওয়ায় পুঃ বঃ কোন ম্যাটার করে নি তখন ।  কিন্তু পরে , বিয়ে যখন জমে ক্ষীর তখন না কি দাম্পত্য কলহে ওই পুঃ বঃ ম্যাটার করতে শুরু করে।  ওই প্রিন্টিং মিসটেককে ঐতিহাসিক ভুল বলে স্বীকার করতেও শোনা যায় তপুকে।   সে যাই হোক , বছর তিরিশ সুখে দুঃখে হাসি কান্নায় কাটিয়ে তপু আর মিলি এখন অপুর গর্বিত মা বাবা।  অপু এই বৈশাখে ঊনত্রিশ ছোঁবে।

বলাই বাহুল্য অপুর কোন গার্লফ্রেন্ড নেই।  বংশ দেখতে হবে তো !  অনলাইন এ কিছু একটা হয়ে যাবে এই আশায় জল ঢেলে অপু যখন বলেই ফেলল "আমার দ্বারা ওসব হবে না " তখন তপুকে হাল ধরতেই হল।  তপুর বাবা, জ্যেঠু, মিলি  ও তপু একটা ক্যাবিনেট লেভেল বৈঠক  করার পর এই সিদ্ধান্তে এলেন যে টেকনোলজি এ পরিবারের কোন কাজে আসবে না , অন্তত বিয়ের মতো এরকম একটা গুরুতর বিষয়ে।  সুতরাং কাগজে বিজ্ঞাপন, যা এই পরিবারকে বারবার আশার  আলো দেখিয়েছে সেইটাই একমাত্র পথ।

 "আমরা এখন অচল" এই বলে বিজ্ঞাপনে কি লেখা হবে তা নতুন জেনারেশনের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন জ্যেঠু।  মিলির সাথে আলোচনা করে তপু একটা ড্রাফট বানিয়ে বলল "আমি একবার জগাদা কে দেখিয়ে নেব, চিন্তা কোর না "।  জগাদা তপুর অফিসতুতো দাদা , খুব ডিপেন্ডেবল। তারপর একদিন জগাদা ও তপু বিজ্ঞাপনের অফিসে গিয়ে শুভ কাজটা করেই ফেলল।  জগাদা শেষ মুহূর্তে ছোটখাট কিছু চেঞ্জ করে ড্রাফটটাকে ফাইনাল করে দিলেন , জগাদা করছেন মানে চিন্তার কিছুই  নেই।  সেদিন বিজ্ঞাপনের অফিস থেকে ফেরার পথে বিরিয়ানি, দুরকমের  ভাল মিষ্টি  আর জগাদাকে নিয়ে তপু বাড়ি ফিরে সবাই মিলে একটা ছোটখাট পার্টিই করে ফেলল।  একমাত্র ছেলের শুভকাজের প্রথম মাইলস্টোন  বলে কথা ! হঠাৎ বিজ্ঞাপনের রসিদটা  দেখে তপু জিগ্যেশ করল "জগাদা , হিসেবের থেকে তো কমই লাগল দেখছি , তুমি কি কিছু কাটছাঁট করলে ? " জগাদা এক গাল হেসে বললেন, "আরে ওসব পঃ বঃ/পুঃ বঃ আজকাল আর চলে নাকি , ওগুলো কেটে দিয়েছি " . তপু আর মিলির  মধ্যে চোখাচুখি শেষ হওয়ার আগেই জগাদা সেন্টেন্সটা শেষ করলেন , "কেটে শুধু "নাঃ পাত্রী চাই " লিখে দিয়েছি " . "নাঃ পাত্রী চাই মানে ?" প্রায় সবাই কোশ্চেন মার্ক।  "মানে নাগরিক পাত্রী চাই " , সহাস্যে রহস্য ভাঙলেন জগাদা।  শুনে মিলির মুখে এপ্রিসিয়েশনের হাসি , তপু গর্বিত আর ডায়াবিটিসের রুগী জ্যেঠু একটা বড় মিষ্টি খপাৎ করে মুখে পুরে বললেন , "যাক, বাড়িতে একজন অন্তত নাগরিক থাকবে তাহলে ".

প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে সেই পার্টির পর।  অপুর উইকেন্ডে কোন নতুন এপয়েন্টমেন্ট হয়নি এখনও।  বেচারা আজকাল একটু মনমরা।  ওর মাথায় কারনে অকারনে একটা শব্দ ঘোরাফেরা করে আজকাল , "অকৃতদার ".

কাল মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে তপুর কেন যেন মনে হল , "কি জানি ? সত্যিই একটা  ঐতিহাসিক ভুল হচ্ছে না তো এবার  ? "

Readers Loved These Posts