Thursday, February 22, 2018

ফিটফাট




বেকার বকবক #১৬

মাঝে মাঝে এমন একেকটা ঘটনা ঘটে যে আমি কে , কেন, কোথায় এসব দার্শনিক ভাবনা চিন্তা আমাকে লাগাতার তাড়া করে বেড়ায়।  অথচ যখন হয়, হঠাৎ। কিছুর মধ্যে কিছু না, অকস্মাৎ , একদিন আচানক। এইতো বছর খানেক আগে এক মনোরম সন্ধ্যায় একটা পাৰ্টিতে যাব বলে তৈরী হচ্ছি।  তার মাস ছয়েক আগে কেনা একটা দামী jeans পরতে  গিয়ে দেখি কোমরে  আর আঁটছে না ।  কাছেই ছিলেন কাছের মানুষ।  চোখাচোখি হতেই আমি বললাম “ছোট হয়ে গেছে”. ব্যাস।  বিষ্ফারিত চোখে উনি বললেন “ছোট হয়ে গেছে ? নিজেকে দেখেছ একবার আয়নায় ?”. কি বিপদ বলুন।  কি করে বোঝাই জামাকাপড় ছোট হয়ে যাওয়ার সমস্যাটা আমার ছোটবেলা থেকেই আছে।  কয়েকমাস অন্তর অন্তর জামা প্যাণ্ট ছোট হয়ে গেলে আমার বাবা আমাকে পাঠাতেন “ফিটফাট টেলার্স “ -এ. সেখানে এক টাক মাথা ভদ্রলোক টুলে বসে ঢুলতেন ।  ওনাকে আমরা ফিটফাট কাকু বলে ডাকতাম।  সেই  ফিটফাট কাকু আমায় দেখে মুচকি  হেসে বলতেন “কি আবার ছোট হয়ে গেছে ? এদিকে আয় “ বলে একটা ফিতে দিয়ে আমার মাপ নিতেন।  এরকম কয়েক বার হওয়ার পর বাবার নির্দেশে দু সাইজ বড় জামা প্যাণ্ট বানাতে শুরু করলেন।  সেই ঢলা পোশাক পরে কেটে গেল আমার শৈশব কৈশোর।  History repeats itself তাই সেই সমস্যা আবার ফিরে এসেছে।  কিন্তু এই তত্ত্ব কাউকে বোঝানো , তাও আবার আজকের দিনে ? ঝগড়া হল , আরও ঝগড়া  হল।  বাড়ন্ত বাচ্চা বলে আমায় অপমান করার পর বোঝানোর  চেষ্টা করলাম মানুষ মাত্রেই grow করে ,সেটাই কাম্য , শুধু একটা সময়ের পর growth টা দৈর্ঘ্যে না হয়ে প্রস্থে হয়।  পৃথিবীর ইতিহাসে দাম্পত্য কলহে কোনদিন কোন পুরুষ জেতে নি , সুতরাং একদিন সকালে আমি আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।  

Tuesday, February 13, 2018

Valentine's Day




বেকার বকবক #১৫


 "এই Teddy টা নিয়ে যান  কাকু "

আশির দশকের গোড়ায় "পাড়ার মেয়েদের পাড়ার বৌ করতে হবে " আন্দোলনের অন্যতম কর্নধার কমরেড পরমেশ মিত্তির  দোকানদারের কথায় একটু হোঁচট খেলেন।  তারপর একবার মাথা চুলকে বললেন " না না ভালুক টালুক দিয়ে  কি করবে , তুই বরং একটা টক ঝাল মিষ্টি চানাচুর দিয়ে দে " . চানাচুর শুনে দোকানদার ছেলেটা কিরকম ভাবে একটা তাকালো।  গতবছর বেশ রোমান্টিক হবে ভেবে তিরিশ বছর আগে সেই প্রথম লুকিয়ে  দেখা করার  দিন কিনে দেওয়া চাটনি  লজেন্স নিয়ে বাড়ি ঢোকার পর গিন্নির মুখটা মনে পরে গেল পরমেশের ।  আন্দোলন ভেস্তে গেছিল নানা কারনে।  শেষমেষ বেপাড়ার মেয়ে পরমার  সাথে প্রেম করে বিয়ে। সুখের সংসার অনেকদিনের।  কিন্তু recently এক নতুন সমস্যা এসেছে পরমেশ মিত্তিরের জীবনে -  Valentine's Day. এক কালে নিজেকে খুব প্রগতিশীল প্রেমিক ভাবলেও আজকাল ঠিক তাল রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে মনে হয় মাঝে মাঝে।  পেয়ারের গিন্নি কি করে এইদিনটায় Valentine হয়ে যায় আর কবে থেকে হল মাথায় ঢোকে না।  পাড়ায় পাড়ায়  প্যান্ডেল খাটিয়ে মাইক বাজিয়ে হৈহৈ ব্যাপার।  আবাসনের সবাই উত্তেজিত এই এক দিন নিয়ে।  Valentine's Day তে গিন্নিকে কি gift দিলেন  তাই নিয়ে সবার মুখে প্রশ্ন চিহ্ন।  সেই tension-এ আপিস থেকে ফেরার পথে কি কিনি কি কিনি করে  দোকানে আসা।  পরমেশ কে আমতা আমতা করতে দেখে ছেলেটা বলল " Valentine's Day-র জন্য বললেন  তো  ? Teddy , chocolate আর ফুল দিতে হবে , ওসব চানাচুর ফানাচুর এ হবে না " .

Tuesday, February 6, 2018

চোর





বেকার বকবক #১৪



ছোটবেলায় তপুদের বাড়িতে একবার চোর এসেছিল। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কিছু নয়  , কারণ চোর তো হামেশাই আসত , চুরি হোত। ছিঁচকে চোর ঘটি বাটি  নিয়ে যেত , সে আর এমন কি বড় ঘটনা।  কিন্তু ওদের বাড়িতে চোরটা ধরা পরতে পরতে পরে নি।  তপু চোখ গোল গোল করে রোমহর্ষক সেই কাহিনী আমাদের বলতো ।  তপু আর ওর ছোটকাকা যে ঘরে ঘুমোচ্ছিল সেই ঘরে চোরটা জানলার শিক ভেঙে ঢুকেছিল।  ঢুকে দামী জিনিসপত্র খুঁজতে খুঁজতে একটু দেরী করে ফেলেছিল।  তপুর কাকার ঘুম ভেঙে যায়।  ঘরের মধ্যে কোন আগন্তুকের উপস্থিতি টের পেয়ে উনি চোর চোর বলে চিৎকার করে মশারী থেকে বেরোতে বেরোতে চোর দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করে। তপুর কাকা স্ট্রাইকারে খেলতেন।  উনি ক্ষিপ্র গতিতে গিয়ে চোরটাকে প্রায় ধরে ফেলেছিলেন।  কিন্তু সমস্যা হল তখনকার দিনে সর্ষের তেল খুব সস্তা ছিল।  চোরটা চপচপ করে সর্ষের তেল মেখে এসেছিল । আর পরনে শুধু গামছা।  তপুর কাকা প্রায় ধরে ফেলেছিলেন কিন্তু সর্ষের তেলে পিছলে গিয়ে চোরটা পালিয়ে যায়।  ধস্তাধস্তিতে তপুর কাকার হাতে থেকে যায় চোরের গামছা।  কিছুই নিতে পারেনি চোরটা।  কিন্তু ঘটনাটা পাড়ায় বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। সবাই ভিড় করে চোরের ফেলে যাওয়া গামছা দেখতে গেছিল।  চাকদা থেকে তপুর  জ্যেঠু এসেছিলেন খুব চিন্তিত হয়ে. চোরের পড়নের গামছাটা দেখে উনি নাকি বীতশ্রদ্ধ মুখে বলেছিলেন “নিৰ্লজ্জ চোর কোথাকার” .

কেউ একটা বলেছিল এরকম অঘটন, একটা পুজো দেওয়া দরকার।  সে প্ৰস্তাৱ তপুর নাস্তিক বাবা, জ্যাঠা নাকচ করে দিয়েছিলেন।  বলেছিলেন defense party করতে হবে।  সে defense party  হয়েছিল।  রাত বিরেতে whistle বাজিয়ে পাড়ার সব লোকের পিলে চমকে তারা সবসময় যে চোর তাড়াতে পেরেছিল বলা যাবে না।  তবে party জমজমাট চলেছিল অনেকদিন। 

Readers Loved These Posts