Saturday, December 23, 2017

দ্বিধা

বেকার বকবক # ৮


রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আমার নড়বড়তা ঘনিষ্ঠ মহলে আমাকে একটু খ্যাতিই এনে দিয়েছে বলা যায়।  অপমানিত হয়েছি, হাসির পাত্র হয়েছি , কিন্তু থেমে থাকিনি।  গটমটিয়ে নড়বড় করে হেঁটে গেছি।  মনে কি দ্বিধা রেখে চলে যাবার পাত্র আমি নই। হিন্দী বলার ব্যাপারে আমার policy হল , দ্বিধা আমার নয় , দ্বিধা তোমার।  অর্থাৎ যা দ্বিধা করার করবেন, করেছেন ও করেন শ্রোতা , আমি যা বলার বলে যাই, না ভেবে ।  আর ভাববই বা কেন , সে যদি বুঝতে পারে তাহলে সমস্যাটা কি ? After all ভাষা হল ভাব প্রকাশের মাধ্যম। এই তো বছর দুই আগে দিল্লী আগ্রা জয়পুর বেড়াতে গিয়ে হিমাচলবাসী এক driver এর সাথে প্রায় সাতদিন fluent হিন্দীতে বাতচিত করে এলাম। হিন্দী ভাষায় আমার দেওয়া instruction follow করেই বেচারাকে সব জায়গায় যেতে হয়েছে।  কিন্তু কোনসময় বিব্রত হতে দেখিনি , বরং সবসময় হাসিখুশীই থাকতে দেখেছি , একটু বেশীই হাসিখুশী।  শুধু একবার মনে হয়েছিল একটু দ্বিধা করছে।  শেষ দিন হোটেলে ফেরার সময় বলেছিলাম “হামকো hotel মে ফেক দো “. শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইল।  গাড়িতে বাকি আর যাঁরা ছিলেন তারা প্রথমে একটু হেসে পরে টেনশন করছিলেন কি হয় কি হয়।  হয় নি কিছু, অক্ষত অবস্থায় হোটেলে পৌঁছেছিলাম।  

আমার জীবনে হিন্দীভাষী শ্রোতাদের দ্বিধার ঘটনা প্রচুর।  কিন্তু সকলেই অল্প সময়ের মধ্যে সেই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন একজন ছাড়া।  বছর পঁচিশ আগে আমাকে কাজের সূত্রে প্রত্যেক সপ্তাহে রাউরকেল্লা যেতে হোত।  রোববার রাতে dinner করে সম্বলপুর এক্সপ্রেসে উঠে ঘুমিয়ে পড়তাম আর পৌঁছে যেতাম ভোর ভোর।  এরকম চলেছিল প্রায় মাস ছয়েক।  ট্রেনের দুলুনিতে  জম্পেশ ঘুম হোত আমার , সকালে একদম fresh , অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী।  সেই রোববার ও ট্রেনে উঠলাম।  আমার উল্টোদিকের seat এ এক মাঝবয়সী অবাঙালী ভদ্রলোক।  ট্রেন ছাড়ার একটু পরে উনি কিছু পরোটা আচার খেয়ে কম্বল বালিশ নিয়ে bunk এ উঠে গেলেন।  আমি আরেকটু পরে ওনার উল্টোদিকের bunk এ ঘুমের জন্য তৈরী।  কিন্তু তখন ওনার মধ্যরাত।  নাক ডেকে জমিয়ে ঘুমোচ্ছেন যাকে বলে একেবারে literally sound sleep. রাত বাড়ছে , ট্রেনের ভেতরে প্রায় সবাই শুয়ে পড়েছে আর ওনার নাক ডাকার শব্দ তত জোরদার হচ্ছে।  আমার ঘুম আসছে না।  যেই চোখ বুঝছি ওই নাক ডাকার শব্দ সব চৌপাট করে দিচ্ছে।  এদিকে সকালে পৌঁছেই meeting. চোখ জ্বালা করছে তাও ঘুমোতে পারছি না।  এভাবে ঘণ্টা দুয়েক যাওয়ার পর সত্যিই খুব রাগ হল।  ভাবলাম ওনাকে বলা দরকার , এভাবে তো চলতে পারে না।  আমার bunk থেকেই হাত বাড়িয়ে দিলাম এক ধাক্কা।  ভদ্রলোক ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসে আমার দিকে তাকিয়ে খুব রাগী মুখ করে বললেন “ Disturb কিউ কর রহা হ্যায়  “ বা কিছু।  Disturb শব্দটা শুনে বাঙালী রক্ত একেবারে মাথায় উঠে গেল।  চিৎকার করে বললাম “আপ নাক সে কিউ বুলাতা হ্যায় ?” বলার সাথে সাথে ভদ্রলোকের মুখে সেই expression , দ্বিধার।  কিরকম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।  কথা না বাড়িয়ে আমি পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।  সারারাত আর নাক ডাকার শব্দ পাই নি।  সকালে উঠে দেখলাম bunk এর ওপর সেই এক ভাবে বসে আছেন , মুখে সেই একই expression. হবেই তো , ওনারই মাতৃভাষায় ওনাকে কিছু বলা হল আর “কি শুনিনু” তার মর্মোদ্ধার করে উঠতে পারলেন না সারারাত ধরে ?  চোখে চোখ না করে নির্দ্বিধায় নেমে গেছিলাম রাউরকেল্লায় , আমার  মিটিং-এর তাড়া ছিল যে ।  এত বছর বাদেও সেই ভদ্রলোকের expression আমার চোখে ভেসে ওঠে মাঝে মাঝে।

হাসছেন ? হাসুন হাসুন যত হাসবেন।  কিন্তু জেনে রাখুন রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আমার দ্বিধার policy পরবর্তী কালে খুব popular হয়েছে রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে।  ওঁরাও “দ্বিধা তোমার” policy তে যা ইচ্ছে বলেন । আর আমরা তার মর্মোদ্ধার করতে গিয়ে ওই একইরকম expression এ আটকে থাকি।  এবার দয়া করে এইসব নেতাদের নাম বলতে বলবেন না। ওইটুকু নিজগুণে বুঝে নিন।  যদি না বোঝেন তাতে আমার কি ? দ্বিধা তো আপনার।

Please Leave Your Feedback or Comment 
🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻🔻

No comments:

Post a Comment

Readers Loved These Posts