Tuesday, February 6, 2018

চোর





বেকার বকবক #১৪



ছোটবেলায় তপুদের বাড়িতে একবার চোর এসেছিল। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কিছু নয়  , কারণ চোর তো হামেশাই আসত , চুরি হোত। ছিঁচকে চোর ঘটি বাটি  নিয়ে যেত , সে আর এমন কি বড় ঘটনা।  কিন্তু ওদের বাড়িতে চোরটা ধরা পরতে পরতে পরে নি।  তপু চোখ গোল গোল করে রোমহর্ষক সেই কাহিনী আমাদের বলতো ।  তপু আর ওর ছোটকাকা যে ঘরে ঘুমোচ্ছিল সেই ঘরে চোরটা জানলার শিক ভেঙে ঢুকেছিল।  ঢুকে দামী জিনিসপত্র খুঁজতে খুঁজতে একটু দেরী করে ফেলেছিল।  তপুর কাকার ঘুম ভেঙে যায়।  ঘরের মধ্যে কোন আগন্তুকের উপস্থিতি টের পেয়ে উনি চোর চোর বলে চিৎকার করে মশারী থেকে বেরোতে বেরোতে চোর দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করে। তপুর কাকা স্ট্রাইকারে খেলতেন।  উনি ক্ষিপ্র গতিতে গিয়ে চোরটাকে প্রায় ধরে ফেলেছিলেন।  কিন্তু সমস্যা হল তখনকার দিনে সর্ষের তেল খুব সস্তা ছিল।  চোরটা চপচপ করে সর্ষের তেল মেখে এসেছিল । আর পরনে শুধু গামছা।  তপুর কাকা প্রায় ধরে ফেলেছিলেন কিন্তু সর্ষের তেলে পিছলে গিয়ে চোরটা পালিয়ে যায়।  ধস্তাধস্তিতে তপুর কাকার হাতে থেকে যায় চোরের গামছা।  কিছুই নিতে পারেনি চোরটা।  কিন্তু ঘটনাটা পাড়ায় বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। সবাই ভিড় করে চোরের ফেলে যাওয়া গামছা দেখতে গেছিল।  চাকদা থেকে তপুর  জ্যেঠু এসেছিলেন খুব চিন্তিত হয়ে. চোরের পড়নের গামছাটা দেখে উনি নাকি বীতশ্রদ্ধ মুখে বলেছিলেন “নিৰ্লজ্জ চোর কোথাকার” .

কেউ একটা বলেছিল এরকম অঘটন, একটা পুজো দেওয়া দরকার।  সে প্ৰস্তাৱ তপুর নাস্তিক বাবা, জ্যাঠা নাকচ করে দিয়েছিলেন।  বলেছিলেন defense party করতে হবে।  সে defense party  হয়েছিল।  রাত বিরেতে whistle বাজিয়ে পাড়ার সব লোকের পিলে চমকে তারা সবসময় যে চোর তাড়াতে পেরেছিল বলা যাবে না।  তবে party জমজমাট চলেছিল অনেকদিন। 

এরপর দিন গেছে।  বাইশ বছর ধরে তৈরী হওয়া  Second Hooghly Bridge চালু হয়েছে। বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে। সর্ষের তেলের দাম আস্তে আস্তে আগুন হয়েছে। এদিক দিয়ে ওদিক দিয়ে Flyover হয়েছে অনেক। TV তে খান দুই channel এর জায়গায় শদুয়েক channel হয়েছে। ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটাকার হয়েছে কলকাতা। Globalization হয়েছে। ত্রিফলা আলোর চোটে গা ঢাকা দেওয়ার জায়গা vanish হয়েছে তবু  চোর এখনো আসে।  তবে তাদের strategy বদলেছে।  চোরদের Union হয়েছে।  স্বাধীনতা হয়েছে।  দাবিদাওয়া হয়েছে। Mission and Vision statement বদলেছে। পরনে  গামছার বদলে কৌপীন থেকে কোট প্যাণ্ট সবই উঠে এসেছে  ।    বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে চোররাও অনেকদূর এগিয়েছে।  অনেক সময় বোঝাও যায় না চোর এসেছিল। কিন্তু চুরি হওয়া জারি আছে। কি নিলো তাও জানা যায় না আপাত ভাবে ।  আর আসার সময়ও  নেই ঠিকঠাক।  যখন তখন আসে।  ধরুন বাড়ি শুদ্ধ লোক TV দেখছে।  সিরিয়ালে বড় বৌমা ওঝা ডাকছে ছোট বৌমাকে ফাঁসানোর জন্য, এদিকে চোর এসে কিছু নিয়ে গেল।  পাড়ায় দুপা যেতে যেতে শনি মন্দির , কালী মন্দির , শেতলা মন্দির এ প্রণাম ঠুকতে ঠুকতে যাচ্ছেন , চুরি হয়ে যাচ্ছে। Astrology channel এ ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছে , ওদিকে চোর কাজ সাড়ছে। তপুর জ্যাঠতুতো দাদা তার বড় মেয়ের বিয়ের জন্য গণৎকারের সাথে পরামর্শ করছেন  , চোরেদের কি উল্লাস।  

অনেকদিন ধরেই এসব চলছে।  চলছে তো চলুক। তপুর জ্যেঠুর অনেক বয়েস হয়েছে।  উনি মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখেন।   এই  সেদিন উনি স্বপ্নে দেখলেন  চোরেদের এক মাথাকে media ধাওয়া করে ধরেছে  ।  পালাবে কোথায় ? Media তো সর্বগামী । পাকড়ে নিয়ে এক্কেবারে Prime Time TV তে। তো সেই মাথার interview নিচ্ছেন এক দুঁদে journalist . খুব নাম করা journalist . তার গলার জোর চোরের মায়ের গলার থেকেও জোরদার।  না হলে কি নামী journalist হওয়া যায় ? গাক গাক করে চিৎকার করছে journalist , না করলে সত্য উদ্ঘাটন হবে কি করে ? সবাই TV র সামনে স্থির, অনেককাল পরে একটা চোর ধরার scene বলে কথা ।  অনেক চেঁচামেচির পর journalist মশাই জিজ্ঞেস করলেন “আপনি "কি" চুরি করেছেন ? “ . চোরেদের মাথা একবার মাথা নামালেন , তারপর তুললেন।  শেষে দুঁদে journalist এর দিকে তাকিয়ে একটা চোরসুলভ হাসি দিয়ে মিটিমিটি চেয়ে তিনি নাকি  বললেন : “ধর্ম নিরপেক্ষতা “.


আগের বকবক 

No comments:

Post a Comment

Readers Loved These Posts